সোমবার, ৯ নভেম্বর, ২০২০

আমার ঠাকুর দাদার গল্প

 আমার ঠাকুরদাদা জনাব ডাঃ আজিজুর রহমান খান ( ঠান্ডা মিয়া )। তিনি মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানার হাজিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । তার পিতার নাম ফজলুর রহমান খান, ফজলুর রহমান খান মানিকগঞ্জ বালিয়াটি জমিদারির নায়েব ছিলেন। ফজলুর রহমান খান সাহেবের পিতার নাম যতদূর জানা যায়, লুৎফুর রহমান খান। তবে আমার পরিবারের গল্পটা সেদিকে যায়নি। আমার ঠাকুর দাদা ছিলেন সত্য জ্ঞান অনুরাগী, চিকিৎসা বিজ্ঞানে লেখা পড়া করার জন্য তিনি কলকাতা গমন করলে, তার পিতা জনাব ফজলুর রহমান খান তার প্রতি নাখোশ হন, কারণ পরিবারের বড় সন্তান ছিলেন আমার ঠাকুরদাদা, ফজলুর রহমান খান চাইতেন তার বড় সন্তান ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে আত্মনিয়োগ করুক ।  ফজলুর রহমান খান মনে প্রাণে ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ বাঙালি মুসলমান ও গোড়া ব্রিটিশ বিরোধী । ফজলুর রহমান খান কখনোই চান নি তার প্রথম সন্তান ঠান্ডা মিয়া পাশ্চত্য শিক্ষায় দীক্ষিত হন । ফজলুর রহমান খান সাহেবের সহধর্মিনী ছিলেন জনাব ফয়জাননেসা, তিনি ধামরাই নিবাসী মাটি জমিনদার জনাব আব্দুল হাকিম চৌধুরীর বড় কন্যা।আমার ঠাকুরদাদার নানা ছিলেন তিনি, হাকিম সাহেব অঢেল ভূ সম্পত্তির মালিক হয়েছিলেন । তিনি ছিলেন ব্রিটিশ রাজ্যের প্রতি সদা অনুগত সেবক, তিনি ১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুবিধা পেয়েছিলেন, তিনি যৌবন বয়সেই ২ টি মৌজার মালিক হয়েছিলেন ছিলেন । আব্দুল হাকিম সাহেবের একমাত্র পুত্র সন্তান ছিলেন জনাব সামসুদ্দোহা চৌধুরী, তিনি ছিলেন অসাধারণ প্রখর মেধাবী,তার অকাল মৃত্যু হলে, হাকিম সাহেব একলা হয়ে পড়েন।একমাত্র পুত্রবিয়োগের যন্ত্রনা আব্দুল হাকিম সাহেব চৌধুরী কে বিমর্ষ করে তুলে, তিনি অঢেল সম্পদ কি করবেন তা নির্ধারণ করতে পারছিলেন না।আব্দুল হাকিম চৌধুরী তার পশ্চিম পাইকপাড়া গ্রামে প্রথম মসজিদ স্থাপন করেন, পুকুর খনন করেন জনসাধারণের জন্য। তিনি পাইকপাড়া জামে মসজিদের প্রথম মোতাওয়াল্লী।


চৌধুরী সাহেবের একমাত্র পুত্রসন্তান বিয়োগের কষ্ট তাকে জীবনের প্রতি বিমর্ষ করে তুলেছিল, তিনি তার প্রখর মেধাবী সন্তান সামসুদ্দোহা হারিয়ে নিঃশেষ। তার কন্যা ফয়জাননেসার সন্তান আমার ঠাকুরদাদা ঠান্ডা মিয়া ছিলেন, তার চোখেরমনি ঠান্ডা কে দেখলেই তিনি দুনিয়াবী সব যন্ত্রণার বোঝা হটিয়ে ফেলতেন, ভাবতেন যে তার সম্পদ দেখাশোনার জন্য যোগ্য কেউ তো আছেন। আমার ঠাকুরদাদার বাবা ফজলুর রহমান খান জীবনদশায় আমার ঠাকুর দাদা কে মাফ করেন নি, তিনি চাইতেন না ইংরেজি শিক্ষায় দীক্ষিত ঠান্ডা মিয়ার রক্ত তার পরিবারের সাথে আর থাকুক। ফজলুর রহমান খান তিন সন্তান ছিল ঠান্ডা, বরফ, শরৎ । তিনি তার সম্পদ ২ ছেলের মধ্যে বাটোয়ারা করে দিয়ে দেন।ঠান্ডা মিয়া কে কখনই তিনি আর পছন্দ করতেন না । ঠান্ডা মিয়া পড়াশুনা শেষ করে কলকাতা থেকে মানিকগঞ্জ আসলে তার বিষয়ে কোনো খোঁজখবর ও নেন নি তার পিতা ফজলুর রহমান খান। এদিকে আমার দাদার মমতাময়ী মা জনাবা ফয়জন্নেসা ছেলের প্রতি স্বামীর এমন কঠোর মনোভাবে খুবই কষ্ট পান এবং আমার ঠাকুরদাদা কে ধামরাইয়ে পাইকপাড়া গ্রামে আব্দুল হাকিম চৌধুরীর নিকট পাঠিয়ে দেন।আব্দুল হাকিম চৌধুরী পাশ্চত্য শিক্ষায় ইংরেজি জানা ঠান্ডা মিয়া কে পেয়ে তার বংশের হারানো আলো খুঁজে পান।